Skip to main content

ফ্রম লাদাখ উইথ লাভ! (Part 02)


সকালের ডাললেক একেবারেই অপরিচিতা। রাতের নিস্তব্ধতার কিছুই আর নেই । ‘শিকারা’ (ডাললেকে চলাচল করা সাজানো ছোট কাঠের নৌকা, ছবিতে দৃশ্যমান) নিয়ে হাঁকডাক দিয়ে বেড়াচ্ছে শিকারার মাঝি । অদূরেই উচু পাহাড় এর ফাঁক দিয়ে সূর্যের আরামদায়ক আলো মুখে আলতো করে ছুয়ে যাচ্ছে । চারপাশে মানুষের কর্মব্যাস্ততা বাড়ছে । আমরাও বেরিয়ে পড়লাম আমাদের হাউসবোট থেকে । জাভেদ ভাই গাড়ি নিয়ে আগে থেকেই তৈরি । আমাদের কাশ্মীরে গন্তব্য পেহেল্গাম, গুলমার্গ আর লাদাখ যাবার পথে সোনমার্গ । দেরি না করে তাই যাত্রা শুরু । পথিমধ্যে আপেল বাগান, আখরোট দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম পেহেলগাম । রাস্তায় আমাদের সঙ্গি ছিল বিখ্যাত ‘লিদার’ নদী । যারা বলিউড-এর পোকা, তারা নানান মুভিতে দেখে থাকবেন এই নদী । জায়গায় জায়গায় বোল্ডার আর ছোট ছোট ফটোজেনিক সেতু । সাথে আরামদায়ক ঠাণ্ডা বাতাস । উদাসী হতে আর লাগে কি! পেহেলগাম অনেকগুলা ভ্যালি-এর সমন্বয় । এখানে ছিল বেতাব ভ্যালি, আরু ভ্যালি । পাহাড়-নদীর পাশে বসে থেকে এখানে সময় কন্দিন দিয়ে চলে যায়, টের পাওয়া দায় । দূরে বরফে ঢাকা সাদা পাহাড়, পাহাড়ের নিচে দৌড়ে বেড়াচ্ছে বেয়াড়া ঘোড়া । এখানে বৃষ্টির কোন ঠিকঠিকানা নাই, অযাচিত অতিথির মত যখন তখন এসে ভিজিয়ে যায় । দিল্লীর গরম থেকে এখানে এসে বৃষ্টি আমাদের ভালোই লাগছিলো, যদিও ভিজতে আমরা সবাই নারাজ । সামনে অনেকদুর পথ, বৃষ্টিতে ভিজে কেউই কাহিল হতে চাইনি । তবে বৃষ্টি দেখতে দেখতে ঘুম আমরা মিস দেই নি । গাড়িতে বসেই ঘুম! ফেরার পথে থামলাম কাশ্মীরের আরেক বিস্ময়, ‘জাফরান’-এর জন্য । দোকানের নাম ‘কিসান কেসার’ । এই জায়গায় গিয়েই দেখলাম জাফরান, এক কেজি জাফরান এর দাম বাংলাদেশি টাকায় ৩০ হাজার টাকা! জাফরান এর গুন অনেক, এখানে আর বিস্তারিত বলবো না । আর কাশ্মীরের জাফরান এর খ্যাতি সারা দুনিয়াজুরে । আমরাও বেশকিছু ড্রাইফ্রূট আর জাফরান নিয়ে নিলাম ঘরের জন্য ।


কাশ্মীরে সাইটসিয়িং তো চলছে, কিন্তু কাশ্মীরি বিরিয়ানি-এর কি হবে? সন্ধ্যাবেলায় তাই চলে গেলাম লোকালি জনপ্রিয় ‘মুঘল দরবার’ রেস্তোরায় । মাটন বিরিয়ানি সাথে আপেল আর আনারসের জুস । জীবন মন্দ না! রাতে থাকার বন্দোবস্ত করেই বের হয়ে গেলাম কাশ্মীরি ‘স্ট্রিট ফুড’ এর খোঁজে । কিন্তু আমাদের কাশ্মীরি সময়জ্ঞানের অভাবে পেলাম শুধু এক কাপ গরম গরম চা! যাইহোক, শ্রীনগরের ফাঁকা রাস্তায় আমরা কজন গল্প করতে করতে হোটেলে ব্যাক করলাম ।
পরদিন সকালে এবারে আমাদের গন্তব্য গুলমার্গ । পেহেলগামে বরফ এর দর্শন পেয়েছিলাম শুধু, তাকে ছুঁতে পারি নি, গুলমার্গ গিয়ে কি সে আক্ষেপ ফুরাবে? – এই প্রশ্ন মাথায় নিয়ে ছুঁটে চললাম । গুলমার্গের উচ্চতা একটু বেশি । একদম উঁচুতে উঠার পথ মুলত দুটি – ক্যাবল কার অথবা ঘোড়া! সঙ্গত কারণেই আমরা ‘ঘোড়ার পিঠে করিয়া উঠিবার প্রয়াস’ নিলাম । জাওয়া-আসা মিলিয়ে প্রায় ৪-৫ ঘন্টার পথ । আমার ঘোড়ার নাম ছিল ‘কাল্লু’, কারন জিজ্ঞেস করতেই ৩২দন্ত বিকশিত করে তার রাখাল থেকে উত্তর পেলাম – ‘উসকা রাঙ্গ কালা হে, ইসলিয়ে উসকা নাম কাল্লু হে’! যাইহোক, আমিও ‘কাল্লু হেই, কাল্লু হই’ করতে করতে পথ চলতে থাকলাম । ইট ওয়াজ এ ভেরি গুড এক্সপেরিয়েন্স! আমার কোমর যদিও আমার সাথে সায় দিবে না এবং স্যাডল ছেড়া থাকাতে দুইবার পড়ে যেতে যেতে বেঁচে যাওয়া সম্পূর্ণই বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল! গুলমার্গের চুড়ার কাছাকাছি পর্যন্ত যাওয়া যায়, যদি ঘোড়সওয়ার হয় কেউ । চুড়ার নিচে দিকবিদিক ছুটে ছুটে বিচরণ করা ভেড়ার পাল এক মজার দৃশ্য । ভেড়ার পেছনে কিছুক্ষণ দৌড়াদৌড়ি করে চলে গেলাম বরফের কাছে । সদ্যই সিকিমে বরফে গোসল করে আসার দরুন বরফ আমার কাছে এখন তেমন আরাধ্য কিছু না তবে বরফ সবসময়ই আনন্দদায়ক এবং ফোটো-এর জন্য আদর্শ সঙ্গি । সবাই পটাপট অগুনিত ছবি তুলে আবার ‘ঘোড়ায় চরিয়া’ নিচে নামলুম । আবার শ্রীনগর ফিরতে হবে । শ্রীনগর থেকে গুলমার্গ, পেহেলগাম ঘুরতে দুইদিন সময় লেগেই যায় কারন আর কিছুই না, গুলমার্গ আর পেহেলগাম দুইটা দুইদিকে আর মাঝে হল শ্রীনগর । গুলমার্গ থেকে শ্রীনগর ফেরার পথে কাশ্মীরি শাল এর দোকানে ঢুকে হাল্কা কেনাকাটা করে নিলাম সবাই ।

শ্রীনগরে এবার পালা কাশ্মীরি কাবাব চেখে দেখার । জাভেদ ভাইকে বলতেই নিয়ে গেলো ‘ওয়াযওয়ান রেস্টুরেন্ট-এ । মানুষের ভীরে বসার জায়গা পাওয়াই দায় । বেশকিছুক্ষন অপেক্ষার পর বসার সুযোগ পেতেই সবাই বসে কাবাব অর্ডার করে ফেললাম । কাবাবের প্রশংসা এ লেখায় খুব একটা করতে পারলাম না বলে দুঃখিত কারন এর থেকে ভাল কাবাব আমি বাংলাদেশেই পেয়েছি । হ্যা, তবে যথেষ্ট মুখরোচক ছিল, তা বলতে হবে ।
রাতে নতুন আরেকটা হোটেলে সব্বাই একসাথে উঠে পড়লাম । এবার রাতে কাশ্মীরের অন্যরূপ! রাত একটু গভীর হতেই শুরু প্রচণ্ড বৃষ্টি সাথে দমকা হাওয়া! ঝরোবৃষ্টি দেখে ভালো লাগলেও মনে মনে একটু সঙ্কিত হচ্ছিলাম কারন পরেরদিন লাদাখের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিব, রাস্তা সঙ্কীর্ণ, বৃষ্টিতে যথেষ্টই রিস্কি! মনে এই আশঙ্কা রেখেই সবাই ঘুমিয়ে পড়লাম । সকালে উঠে অবশ্য সব পরিষ্কার । স্নিগ্ধ আকাশ আর নাতিশীতোষ্ণ তাপমাত্রা । জাভেদ ভাইকে নিয়েই শুরু করে দিলাম আমাদের লাদাখ যাত্রা ।
সম্পূর্ণ লেখায় কোথাও খরচের কিছুই উল্লেখ করা হয় নি । সম্পূর্ণ খরচ আলাদা করে এবার দেয়া হবে । যেই এই লেখা পরবেন, একটা জিনিস মাথায় রাখবেন, আমরা যখন গিয়েছি তখন টুরিস্ট সিজন মাত্র শুরু হয়েছে, মানুষ কম বিধায় অনেক কিছুই আমরা অনেক কম খরচে পেয়েছি আর যাই ঠিক করেন, করার আগে ভালভাবে, সুন্দরভাবে দামাদামি করে নিবেন ।
শ্রীনগর সাইটসিইং – ২ দিন (পেহেলগাম+গুলমার্গ+শ্রীনগর লোকাল ঘুরাঘুরি) – ৫,০০০ রুপি (৬ জন)
গুলমার্গ – (ঘোড়া+গাইড) – ৬,৬০০+৯০০ রুপি (৬ জন)
শ্রীনগর – লেহ লাদাখ – ১৩,০০০ রুপি (৬ জন) (চলবে)

ভিডিও লিঙ্ক - https://www.youtube.com/watch?v=9EgWXH4-_Z0

যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে পরিবেশের ক্ষতি করবেন না। একজন ট্রাভেলার হয়ে অন্য ট্রাভেলার কে সম্মান করুন, আপনিও সম্মানিত হবেন। বিশেষ করে নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা আর সম্মানশীল হোন ।

Comments

Popular posts from this blog

আজগর আলী চৌধুরী জামে মসজিদ - Azgar Ali Chowdhury Jam-e Masjid

আজগর আলী চৌধুরী জামে মসজিদ আনুমানিক ১৭৯৫ সালে আজগর আলী চৌধুরী নামে একজন স্থানীয় ব্যক্তি এই মসজিদটি তৈরি করেন এবং উনার নামানুসারে এই মসজিদটির নামকরণ করা হয় ‘আজগর আলী চৌধুরী জামে মসজিদ’। নগরীর হালিশহরস্থ চৌধুরীপাড়া বাজারের থেকে অল্প সামনে, ১০ শতক জমির ওপর এবং প্রায় ৩০ জন মানুষ ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ২৫০ বছরের পুরনো মসজিদটি বর্তমানে সংস্কার করে, প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ে এর পশ্চিম দিকে আরেকটি নতুন মসজিদ তৈরি করা হয়, যার চারপাশে লেকের আদলে এবং দূর থেকে পানির ওপর ভাসমান স্থাপনা বলে মনে হয়। মোঘল স্থাপনাকে অনুকরণ করে তৈরি করা এই মসজিদটিতে রয়েছে ২৪ টি মিনার আর তিনটি গম্বুজ। এই মসজিদটির একটি লক্ষণীয় বিশেষত্ব হচ্ছে জানালার অনুপস্থিতি। এছাড়া প্রবেশদ্বারের আকারও খুব ছোট। কালের বিবর্তনে খানিক মাটিতে দেবে যাবার কারণে মসজিদটি একটু এক পাশে বাঁকা! হয়তো আর বেশিদিন নেই এই ঐতিহাসিক স্থাপনা আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে যাবার। সময়ের পরিক্রমায় আর্কিটেকচারাল জৌলুস অনেকটাই কমে গেলেও এর সামনে যখন আপনি দাঁড়াবেন, সেই সময়ের কথা ভেবে আপনার মন উদাসী হতে বাধ্য। Azgar Ali Chowdhury Jam-e Masjid The mosque was

যোগী থেকে তাজিংডং - বারবার ফিরে যাওয়া পথের গল্প

দু'তিন মাসে একবারে ঘুরতে বের হওয়া আমাদের মত কিছু মানুষের এই হয়েছে কাল! ঘুরে আসার পর সবার সাথে অভিজ্ঞতাটুকু ভাগাভাগি না করলে (পড়ুন সবাইকে না জানালে!) কেমন যেন মনে হয় ভ্রমণ সম্পূর্ণ হল না! ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ হিসেবে যুক্ত হয় লিখে মনের ভাব প্রকাশের অপারগতা এবং লেখা লিখে শেষ না করা পর্যন্ত দুর্বার মানসিক যাতনা! ট্যুরে কষ্ট করে ঘুরে আসার পর, সুতীক্ষ্ণ (!) লেখনি দিয়ে সবাইকে কষ্ট না দিলে কিসের আবার ঘুরাঘুরি! সেই দুরভিসন্ধি বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যেই তাই এ উপস্থাপনা!  যাত্রার প্রাক্কালে পরিকল্পনা করেই বরাবর বের হওয়া আমাদের অভ্যাস। সবাইকেই সেই একই পরামর্শও আমরা দিয়ে থাকি। সে যাইহোক, পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা যাত্রা শুরু করি আলিকদম থেকে তিন্দু হয়ে রেমাক্রি এবং রেমাক্রি থেকে দলিয়ান পাড়ার উদ্দেশ্যে। দলিয়ান পাড়ায় দু’তিনদিন থেকে যোগী পাহাড় সামিট করে, সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম রুটে, প্রায় ২৫ কিলো পাহাড়ি পথ ভেঙে শেরকর পাড়া এবং ওখান থেকে তাজিংডং। পথিমধ্যে লক্ষ্য, বেশকিছু নতুন পাড়া একটু করে হলেও ঢুঁ মারা, নানানভাবে অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করার প্রয়াস বলতে পারেন।  তো চলুন, নিয়ে যাই আপনাদের, বাংলাদেশের সৌন্দর্যের র

খাঁন সাহেব আবদুল হাকিম মিয়া জামে মসজিদ - Khan Sahib Abdul Hakim Mia Jam-e Mosque

  খাঁন সাহেব আবদুল হাকিম মিয়া জামে মসজিদ চট্টগ্রামের আরেকটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ হিসেবে পরিচিত নগরীর মন্সুরাবাদে অবস্থিত খাঁন সাহেব আবদুল হাকিম মিয়া জামে মসজিদ। বয়সে প্রবীণ এই মসজিদটি কিছুদিন আগেই ছুয়েছে শতবর্ষের মাইলফলক। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেল বর্তমানে এই মসজিদটির বয়স ১৩৭ বছর। গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে রেনোভেশনের কাজ চলছে এই মসজিদটির। মসজিদটির চারপাশে রয়েছে বেশকিছু পুরনো কবর। ভিন্ন স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য নিদর্শন এই মসজিদটির ভেতরে মূল কক্ষ এবং এবং চারপাশে রয়েছে বর্ধিত অংশ। দেওয়ানহাটের মনসুরাবাদ পাসপোর্ট অফিস ফেলে সামান্য একটু সামনে গিয়ে, হাতের বামপাশ দিয়ে যে গলিটি গেছে, তা ধরে সোজা ৫-৭ মিনিট এগিয়ে গেলেই দেখা মিলবে এই অনিন্দসুন্দর মসজিদটির। Khan Sahib Abdul Hakim Mia Jam-e Mosque Khan Sahib Abdul Hakim Mia Jam-e Mosque is located near Mansurabad, Dewanhat is also known as another beautiful mosque of Chittagong. This age-old mosque has recently reached the milestone of the centenary. Talking to the locals, I came to learn that the mosque is now 137 years old. The mosque has